৭ গোলের রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচে রিয়ালকে হারাল ম্যানসিটি
ঘরের মাঠে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালের প্রথম লেগে মুখোমুখি ম্যানচেস্টার সিটি। ইতিহাদে ম্যাচের ১ম মিনিট থেকে শুরু করে রোমাঞ্চ ছড়িয়েছে ৯০তম মিনিট পর্যন্ত। রিয়ালের ওপর চড়াও হয়ে সিটির গোলের জবাব রিয়াল দিয়েছে গোলের মাধ্যমেই।
তবুও শেষ পর্যন্ত এক গোলের কমতিতে পড়েছে লস ব্ল্যাঙ্কোসরা। কেভিন ডি ব্রুইন, গ্যাব্রিয়েল জেসুস, ফিল ফোডেন আর বার্নার্দো সিলভারা করেছেন মোট চারটি গোল। অন্যদিকে ভিনিসিয়াস জুনিয়রের তড়িৎ গতির অবিশ্বাস্য এক গোলের সঙ্গে করিম বেনজেমার পেনেনকা পেনাল্টি আর সঙ্গে আরেকটি অসাধারণ গোলে রিয়াল সাকুল্যে পেয়েছে তিনটির দেখা।
এতেই ম্যাচ শেষ হয়েছে ৪-৩ গোলের ব্যবধানে সিটির জয়ে।
'চ্যাম্পিয়নস লিগ এট ইটস বেস্ট' ম্যাচ চলাকালীন বারবার এটাই বলছিলেন ধারাভাষ্যকররা। গোটা ম্যাচ থেকে চোখ সরানোর অবস্থায় যেন ছিল না। এই বুঝি মিস হয়ে গেল অসাধারণ কোনো মুহূর্ত। এমনটাই দেখা গেছে ম্যানচেস্টার সিটি ও রিয়াল মাদ্রিদের মধ্যকার চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালের প্রথম লেগ।
ম্যাচের দুই মিনিটের মাথায় ডান দিক দিয়ে আক্রমণে ওঠেন রিয়াদ মাহারাজে। রিয়ালের রক্ষণকে একাই ধসিয়ে দিয়ে ডি-বক্সে দুর্দান্ত এক ক্রস করেন তিনি। মাহারেজের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে রিয়ালের দুই খেলোয়াড়ের মধ্য দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে হেড করে বল জালে জড়ান কেভিন ডি ব্রুইন। ম্যানসিটি এগিয়ে যায় ১-০ গোলের ব্যবধানে।
রিয়ালকে গুছিয়ে উঠতে সময় দেয়নি সিটি। প্রথম গোল করার পর আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সিটিজেনরা। এবার স্কোরশিটে নাম লেখান দুর্দান্ত ফর্মে থাকা গ্যাব্রিয়েল জেসুস। ১১তম মিনিটের মাথায় বাঁ দিক দিয়ে আক্রমণে উঠে ডি-বক্সে ক্রস করেন কেভিন ডি ব্রুইন। রিয়ালের ভেঙে পড়া রক্ষণের সুযোগ নিয়ে কোর্তোয়াকে পরাস্ত করে বল জালে জড়ান জেসুস। সিটি লিড নেয় ২-০ গোলের।
ইতিহাদে এরপরে রিয়ালকে নিয়ে এক প্রকার ছেলেখেলায় শুরু করে পেপ গার্দিওলার দল।
ডান দিক দিয়ে রিয়াদ মাহারেজ, বাঁ দিক দিয়ে কেভিন ডি ব্রুইন আর মধ্যমাঠ দিয়ে বার্নার্দো সিলভা রিয়ালের খেলোয়াড়দের নাচিয়েছেন সবাই মিলে। লুকা মদ্রিচ কিংবা টনি ক্রুস খেই পাচ্ছিলেন না কেউই। আক্রমণে ওঠার কথা বেমালুম ভুলে বসেছিল বেনজেমা-ভিনিসিয়াসরা। অবশ্য সিটির আক্রমণ রুখেই কিনারা পাচ্ছিল না রিয়ালের রক্ষণ আক্রমণ করবে কীভাবে?
২৬তম মিনিটে বার্নার্দো সিলভা দারুণ এক বল দেন মাহারেজকে। বল পেয়ে ডান দিক থেকে ফোডেনের উদ্দেশ্যে বল বাড়ান মাহারেজ তবে বল ধরতে পারেননি এই ইংলিশ ফরোয়ার্ড।
এর মিনিট চারেক পরে বাঁ দিক দিয়ে আক্রমণে উঠে ডি-বক্সে দুর্দান্ত এক ক্রস দেন বেনজেমা। ডি-বক্সে দৌড়ে আসা ডেভিড আলাবা হেড করলেও তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে হতাশ হয় রিয়াল শিবির।
ম্যাচে ফিরতে বেশি সময় নেয়নি রিয়াল। ৩৩তম মিনিটে বাঁ দিক দিয়ে আক্রমণ উঠে ফারল্যান্ড মেন্ডি ক্রস করেন ডি-বক্সে থাকা বেনজেমার উদ্দেশ্যে। ডি-বক্সের ঠিক ভেতরে বল পেয়ে বাঁ পায়ের হাফ ভলিতে বল জালে জড়ান। রিয়াল তখন ২-১ গোলের ব্যবধানে পিছিয়ে। প্রথমার্ধের শেষ সময়টুকুও তখন সিটিজেনদের দখলে থাকে।
দ্বিতীয়ার্ধে ফিরেই ম্যাচের ৪৮তম মিনিটে ব্যবধান ৩-০ হতে পারতো। তবে মাহারেজের শট গোলপোস্টে লেগে ফিরে আসার পর ফোডেনের নেওয়া শট ব্লক করেন কার্ভাহাল। এতেই রক্ষা মেলে রিয়ালের।
তবে রিয়ালকে স্বস্তিতে থাকতে দেয়নি সিটি। এর মিনিট পাঁচেক পরে ডান দিক দিয়ে আক্রমণে উঠে দারুণ এক ক্রস ফোডেনের উদ্দেশ্যে করেন ফার্নান্দিনহো। আর ক্রস পেয়ে দানি কার্ভাহালের সামনে থেকে লাফিয়ে উঠে বল জালে জড়িয়ে ব্যবধান ৩-১ করেন ফিল ফোডেন।
এই গোলের রেশ কাটতে না কাটতেই অবিশ্বাস্য এক গোল করে রিয়ালকে আবারও ম্যাচে ফেরান ভিনিসিয়াস জুনিয়র। মধ্যমাঠে ফারল্যান্ড মেন্ডি বল পেয়ে তা বাড়ান ভিনিসিয়াসের উদ্দেশ্যে। তবে ভিনিসিয়াসের সামনে থাকা ফার্নান্দিনহো ভেবেছিলেন বল রিসিভ করেন তিনি কিন্তু চতুরতা দেখিয়ে ফার্নান্দিনহোর পায়ের ফাঁক দিয়ে বল বের করে নেন ভিনিসিয়াস।
আর মধ্যমাঠে বল পেয়ে চিতার ক্ষিপ্রতায় বল নিয়ে একাই ঢুকে পড়েন সিটির ডি-বক্সে। সিটিজেনদের দুই খেলোয়াড় কেবল দৌড়ে গেছেন ভিনিসিয়াসের পেছনেই কিন্তু তার গতির সঙ্গে পেরে ওঠেননি। আর ডি-বক্সে ঢুকেই এডারসনকে পরাস্ত করে স্লাইড করে বল দূরপোস্ট দিয়ে জালে জড়িয়ে ব্যবধান ৩-২ করেন।
এবার দুই দলই আক্রমণের পর আক্রমণ করে যাচ্ছিল। তবে বেশিরভাগ সময় বলের দখলে রাখা সিটিই আতংক ছড়াচ্ছিল মাঠজুড়ে।
গোটা ম্যাচের ৬০ শতাংশ বল দখলে রেখে ১৬টি শট নিয়েছে সিটি যার মধ্যে ৬টিই ছিল রিয়ালের গোল বরাবর। অন্যদিকে ১১টি শট নেওয়া রিয়াল ৫টি রাখতে পেরেছিল লক্ষ্যে। সিটি গোলের ছয়টি সুযোগ তৈরি করেছিল আর রিয়াল করেছিল মাত্র দুটি।
এর মধ্যেই ম্যাচের ৭৪তম মিনিটে রিয়াল খেলোয়াড়রা এক মুহূর্তের জন্য যেন থমকে গিয়েছিল আর সেই সুযোগ নিয়েই গোল করে দলকে ৪-২ গোলের ব্যবধানে এগিয়ে নিলেন বার্নার্দো সিলভা।
ডি-বক্সের সামনে জেঞ্চেঙ্কোকে ফাউল করেন টনি ক্রুস, রিয়ালের খেলোয়াড়রা ভেবে বসেছিলেন রেফারি হয়তো ফাউলের বাঁশি বাজাবেন তবে তখন বল পেয়ে যান সিলভা আর তাতেই সুবিধা পায় সিটি। যেখানে রিয়ালের কামাভিঙ্গা, কার্ভাহাল এমনকি থিবো কোর্তোয়া ভেবেছেন রেফারি ফাউলের বাঁশি বাজাবেন তখনই সিলভা শট নিয়ে সবাইকে চমকে দিয়ে বল জড়িয়েছেন জালে।
ম্যাচের ঘড়ির কাঁটা তখন শেষ ১০ মিনিটে প্রবেশ করেছে। সেট পিস থেকে আসা বল ডি-বক্সের ভেতর লাফিয়ে উঠে বিপদমুক্ত করতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনল এমিরিক লাপোর্তে।
লাফিয়ে উঠে হাতে বল লাগালেন তিনি। আর সঙ্গে সঙ্গে রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজালেন। স্পট কিক নিতে এলেন করিম বেনজেমা। নিজের শেষ ম্যাচে ওসাসুনার বিপক্ষে দু'দুটি পেনাল্টি মিস করেছিলেন বেনজেমা। আর শেষ চারটি পেনাল্টির মধ্যে তিনটিই তিনি মিস করেছিলেন। এমন অবস্থায় আবারও পেনাল্টি নিতে এলেন তিনি। এবার দৌড়ে এসে পেনেনকা শটে এডারসনকে পরাস্ত করে বল জালে জড়ালেন করিম মোস্তফা বেনজেমা। রিয়াল তখন ৪-৩ গোলের ব্যবধানে পিছিয়ে।
চলতি মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে এটি বেনজেমার ১৪তম গোল।
যার মধ্যে শেষ ষোলোতে পিএসজির বিপক্ষে তিনটি, কোয়ার্টার ফাইনালের দুই লেগ মিলিয়ে চেলসির বিপক্ষে চারটি আর সিটির বিপক্ষে সেমিফাইনালের প্রথম লেগেই পেলেন দুটি গোলের দেখা।
শেষ পর্যন্ত ওই ৪-৩ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ম্যানচেস্টার সিটি। সেমিফাইনালের ফিরতি লেগে দুই দল আগামী ৪ মে বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় রিয়ালের ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে মুখোমুখি হবে।
The post appeared first on Sarabangla | http://dlvr.it/SPJDqd
এই পোস্টটি শেয়ার করুন