এই মাত্র পাওয়া

আজ ,

জনপদ থেকে সোহরাওয়ার্দী

প্রাচীনকালে "বঙ্গের" বাংলা ভাষাভাষি মানুষগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনপদে বিভক্ত ছিলো। এই বিভক্ত জনগোষ্টির জনপদ গুলোকে একত্রিত করে একটি স্বাধীন স্বার্বভৌম রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শশাঙ্ক নামের একজন শাসক। 

জনপদ থেকে সোহরাওয়ার্দী

তার মৃত্যুর পর বিদ্যমান মাৎস্যন্যায় অবস্থার অবসান ঘটিয়ে "গোপাল" পাল বংশের প্রতিষ্টা করেছিলেন। এরপর থেকেই "বঙ্গ"নামের রাজ্যটি পাল এবং সেনদের দ্বারা শাসিত হতে থাকে। সেনবংশের শেষ রাজা লক্ষনসেনের শাসনামলে মুসলিম সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ  বখতিয়ার খলজির আকস্মিক আক্রমণ বঙ্গে সেনদের পরাস্ত করে-সেখানে মুসলিম শাসনের সুত্রপাত ঘটায়। 

এদিকে আলাউদ্দিন হোসাইন শাহের শাসনামলে বাঙ্গালী জাতীয়তা বাদের উন্মেষ ঘটলেও পরিপূর্ণ বিকাশের পুর্বেই সুলতানী আমলের অবসান ঘটে। মুঘল শাসনামলে বাংলার স্বাধীন শাসক দাউদ খান কররানী মুঘলদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন - কিন্তু পরবর্তী শাসকের অযোগ্যতায় মুঘল সম্রাট আকবরের আক্রমনে বাংলা আবারো পরাধীনতার শৃংখলে আবদ্ধ হয়। 

মুঘল শাসনের শেষের দিকে আলীবর্দি খান বাংলায় স্বাধীন নবাবী রাজ্যের প্রতিষ্টা করেছিলেন - কিন্তু তার মৃত্যুর পর নবাব সিরাজের শাসনামলে দেশী/বিদেশি ষড়যন্ত্রের ফলে পলাশীর  আম্রকাননে বাংলাকে আবারো পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হতে হলো।প্রায় পৌনে দুইশত বৎসরের বৃটিশ উপনিবেশিক শাসনের -- শোষন আর নির্যাতনের বেড়াজাল থেকে মুক্ত হতে ছোটখাটো দু-একটি আন্দোলন যুক্ত হলেও মুক্তি আসেনি বাঙ্গালীর।

সুযোগ্য নেতৃত্বের অভাব জাতীয়তাবাদ বিকাশে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। অবশেষে ভাষা আন্দোলন বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদকে বিকশিত করে গোটা জাতিকে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখায়। ঠিক সেই সময় বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য নেতৃত্ব বাঙ্গালী জাতিকে স্বায়ত্তশাসনের স্বপ্ন দেখায় - সেই স্বপ্ন এক সময় স্বাধীনতার পথে ধাবিত হয়। 

অসাম্প্রদায়িক চেতনায় গোটা বাঙ্গালী জাতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নির্দেশিত পথে--বিপ্লবের মাধ্যমে পরিবর্তনে বদ্ধপরিকর হয়ে উঠে।এর পুরোটা জুড়েই ছিল বঙ্গালী জাতীয়তাবাদী চেতনার পরিপূর্ণ বিকাশ। একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার সম্মিলিত প্রচেষ্টার পরিপুর্ন বাস্তবায়ন বঙ্গবন্ধুর "স্বাধীন বাংলাদেশ"।"এই অর্জন পুরো বাঙ্গালির" - রবি ঠাকুরের স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্টার চেষ্টায় "শেরে বাংলা/সোহারওর্য়াদীর" প্রানান্ত চেষ্টার পরিপুর্নতা এসেছিল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে নয় মাসের সশস্ত্র সংগ্রামের সফল পরিনতি-- ১৯৭১সালের ১৬ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি সৈন্য বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে।

এই স্বাধীন স্বার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্টায় ৩০লাখ শহীদ আর ৩লাখ সম্ভ্রম হারানো মা'বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত "বাংলাদেশ"রক্ত দিয়ে কিনেছে বাঙ্গালী। পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে স্বদেশে ফিরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনঃগর্ঠনে অক্লান্ত পরিশ্রম করে- বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মানুষের জন্য যে পরিকল্পনা করেছিলেন-- সেটির সফল বাস্তবায়নই আজকের এই "সোনার বাংলাদেশ"।গোটা বাঙ্গালী জাতি সমকালীন বাঙ্গালীর সংগ্রামী চেতনা ও ত্যাগের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যের ইতিহাসকে শ্রদ্ধাভরে স্মরন করে এবং করবে। 

এটি বাঙ্গালির স্বর্নালী ঐতিহ্যের সমন্বিত ধারাবাহিকতার গর্বিত অধ্যায়। কিন্তু স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে এসে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে বিতর্ক শুধুই দুঃখজনক ও -অনভিপ্রেত নয়,এটি চরম হতাশাজনকও।

বাঙ্গালীর ঐতিহাসিক বিজয় ও স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস এখন সমুজ্জ্বল ও মীমাংসিত। ২০২১সাল বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরের বিজয়ের মাসে "বাংলাদেশ" সুবর্ণ জয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষ অতিক্রম করতে যাচ্ছে স্বাধীনতা সংগ্রামের বীরযোদ্ধা এবং বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই হয়তো বিজয়ের মাস পাবেন কিন্তু সুবর্ণজয়ন্তী আর মুজিববর্ষের সাক্ষী হতে পারবেনা তাই ২০২১সালের এই বিজয়ের মাস হউক আত্বসুদ্ধির মহেন্দ্রক্ষন। 

আসুন আমরা সকলেই ভেবে দেখি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারনে আপনি/আমরা কতটা স্থির আর আদর্শিক ? তাতে স্বাধীনতার সুবর্ণ জযন্তী সফল হবে সার্থক হবে মুজিব শতবর্ষ।

লেখক : মোঃ এমদাদুল হক বাবুল, প্রভাষক,ইতিহাস বিভাগ,পূর্বধলা সরকারি কলেজ। 

এই পোস্টটি শেয়ার করুন
সবার আগে কমেন্ট করুন
কমেন্ট করতে ক্লিক করুন
comment url
আজকের সেরা খবর গতকালের সেরা খবর

এডিটর নির্বাচিত ভিডিও