আরে দাদা প্রটোকল রাখেন— প্রণব মুখার্জিকে বলেছিলেন শেখ হাসিনা
ঢাকা: পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন প্রণব মুখার্জি। সে সময় তিনি ছিলেন মন্ত্রিপরিষদের সদস্যও। প্রণব মুখার্জির এই দায়িত্বভারে উচ্ছ্বাস জানিয়ে টেলিফোন করেছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফোন পেয়ে প্রণব মুখার্জি আপ্লুত হয়েছিলেন বটে, তবে হাসির ছলে এটিও মনে করিয়ে দেন, একজন প্রধানমন্ত্রী অন্য কোনো দেশের নিছক এক মন্ত্রীকে অভিবাদন জানাবে— এটি তো প্রটোকল লঙ্ঘন। জবাবে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আরে দাদা! আপনার প্রটোকল রাখেন। আপনি তো আমার দাদা।,
ভারতের সংবাদমাধ্যম টাইমস নাও- এর ন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স এডিটর শ্রীঞ্জয় চৌধুরী একটি নিবন্ধে এ ঘটনার উল্লেখ করেছেন। ঘটনাটি তাকে প্রণব মুখার্জি স্বয়ং বলেছেন।,
মূলত প্রণব মুখার্জির সঙ্গে শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সম্পর্ক কতটা নিবিড় ছিল, সেটি বোঝাতে শ্রীঞ্জয় চৌধুরী ঘটনাটি উল্লেখ করেন। শ্রীঞ্জয় চৌধুরীর লেখার শিরোনাম: বাংলাদেশের অনবদ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের সঙ্গে তার সম্পর্ক।,
বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) টাইমস নাও-এ প্রকাশিত ভারতীয় সাংবাদিক শ্রীঞ্জয় চৌধুরীর লেখায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রণব মুখার্জির ব্যক্তিগত হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্কের আরও কিছু উদাহরণ পাওয়া গেছে।
শ্রীঞ্জয় চেীধুরীকে প্রণব মুখার্জি বলেছিলেন, ‘ঢাকা থেকে যখনই কেউ আসতেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় তার জন্য মিষ্টি এবং ধুতি পাঠাতেন।’
ভারতের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর মুখার্জি একবার এই সাংবাদিককে বঙ্গবন্ধুর লেখা ‘অসমাপ্ত আত্নজীবনী’ বইটি দেখান। যে বইটির শুরুতে লেখা ছিল ‘দাদা ও বৌদি (মুখার্জির স্ত্রী শুভ্রা)’ এবং নিচে শেখ হাসিনার স্বাক্ষর ছিল। স্বাক্ষরের নিচে শেখ হাসিনা যেই তারিখটা লিখেছিলেন সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রণব মুখার্জি যেদিন ভারতের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন স্বাক্ষরটি ছিল সেদিনের।,
প্রণব মুখার্জি জানান, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বইটি তাকে পৌঁছে দেন।,
একবার শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার বৈঠকের মধ্যেই প্রণব মুখার্জির ফোন রিসিভ করেছিলেন বলেও এই সাংবাদিককে জানান প্রণব মুখার্জি।,
শেখ হাসিনা ও প্রণব মুখার্জির মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্কের শুরু আরও অনেক আগে থেকে। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর শেখ হাসিনা ও তার বোনকে সাহায্য করেছিলেন প্রণব মুখার্জি।,
দুই দেশের নেতাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালো সম্পর্ক দেশ দুটির সরকারের ওপরও প্রভাব ফেলে। যেমন শেখ হাসিনার সঙ্গে ইন্দিরা গান্ধী ও রাজিব গান্ধীর ক্যাবিনেট মিনিস্টার প্রণব মুখার্জি এবং মনমোহন সিংয়ের ভালো সম্পর্ক থাকায় তার সুফল বাংলাদেশ এবং ভারত উভয়ই ভোগ করেছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগামী বছরের ৭-৯ সেপ্টেম্বর শুধু জি-২০ ভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানকেই আমন্ত্রণ জানানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানাবেন।,
সাংবাদিক শ্রীঞ্জয় চৌধুরী তার নিবন্ধে লিখেছেন, শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক দিল্লি সফরে সম্ভবত জি-২০ সম্মেলনে তার বিশেষ উপস্থিতির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।,
আগামী বছর অনুষ্ঠেয় এই জি-২০ সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ এবং আরও ১৪টি দেশের নেতারা।,
সাংবাদিক শ্রীঞ্জয় চৌধুরী উল্লেখ করেন, ‘ভারতের সংবাদমাধ্যমের প্রতি শেখ হাসিনার শ্রদ্ধাও ভোলার মতো নয়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের জন্য তিনি সবসময়ই সময় বের করে নেন। একবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকার নেওয়ার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘আমাকে ৮ মিনিট সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটি খুব দ্রুতই ২৮ মিনিটে পরিণত হয়।’
from Sarabangla https://ift.tt/OzUarwf