নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার আহ্বান ৩৯ বিশিষ্ট নাগরিকের

ঢাকা: আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করতে দেশের ৩৯ জন বিশিষ্ট নাগরিক নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে আহ্বান জানিয়েছেন। মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনে পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে এই দাবি জানানো হয।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও সাবেকমন্ত্রী ব্যারিস্টার আমির-উল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রমুখ।,


বিবৃতিতে বলা হয়, রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়াই বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ভোটগ্রহণে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা মনে করি যে, কমিশনের এ সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। এটি রাজনৈতিক বিতর্ককে আরও উসকে দেবে এবং কমিশনের বর্তমান আস্থার সংকটকে আরও প্রকট করে তুলবে।,



আমরা আবারও একটি ব্যর্থ নির্বাচনের কবলে পড়ব, যা জাতি হিসেবে আমাদের চরম সংকটের দিকে ধাবিত করবে। এতে বলা হয়, কমিশনের সিদ্ধান্তের অযৌক্তিকতার একটি কারণ হলো, প্রযুক্তিগতভাবে ইভিএম একটি দুর্বল যন্ত্র। এতে ‘ভোটার ভেরিফাইড পেপার অডিট ট্রেইল‘ (ভিভিপিএটি) নেই, যার ফলে কমিশন ভোটের যে ফলাফল ঘোষণা করবে তা-ই চূড়ান্ত হিসেবে গ্রহণ করতে হবে এবং এটি পুনঃগণনা বা নিরীক্ষা করার সুযোগ থাকবে না। এ কারণেই কমিশন কর্তৃক গঠিত কারিগরি উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান প্রয়াত জামিলুর রেজা চৌধুরী ২০১৮ সালে ইভিএম কেনার সুপারিশে স্বাক্ষর করেননি।,



প্রসঙ্গত, ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তাদের ইভিএমে ভিভিপিএটি যুক্ত করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, প্রযুক্তির কারণে ইভিএম ব্যবহার করে ডিজিটাল জালিয়াতিও করা যায়। বায়োমেট্রিক্সভিত্তিক ইভিএম অনেক ভোটারকেই শনাক্ত করতে পারে না, ফলে কমিশন প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের তাদের আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে যন্ত্রটি খুলে দেওয়ার তথা ইভিএমকে ওভাররাইড করার ক্ষমতা দিয়ে থাকে। যেকোনো ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রের মতো প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে ইভিএমের ফলাফল নিয়েও কারসাজি করা যায়। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এছাড়া নির্বাচনের সময়ে মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত কারিগরি টিমও নির্বাচনি ফলাফল বদলে দিতে পারেন। গত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অন্তত দুইবার ফলাফল প্রকাশের অভিযোগ উঠেছে, যা কেবল ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমেই সম্ভব।,


এছাড়াও আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে যে, ইভিএম ব্যবহার করার কারণে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। কমিশনের সিদ্ধান্তের অযৌক্তিকতার আরেকটি কারণ হলো, ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিতর্ক থাকা এবং এ ব্যাপারে ঐকমত্য তৈরি না হওয়া। সম্প্রতি কমিশনের ডাকা সংলাপে যে ২২টি দল ইভিএম নিয়ে মতামত ব্যক্ত করেছে তার মধ্যে ১৪টি দল এটি নিয়ে তাদের সংশয় ও সন্দেহের কথা স্পষ্টভাবেই বলেছে। এর মধ্যে নয়টি দল সরাসরি ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে মত দিয়েছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগসহ চারটি দল ইভিএমে ভোট চেয়েছে। এছাড়া বিএনপিসহ যে নয়টি দল ইসির সংলাপ বর্জন করেছিল, তারাও ইভিএমের বিপক্ষে।,


প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল নিজেও সংলাপের সময়ে বলেছিলেন, ‘অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ইভিএমে বিশ্বাস করছে না। তাই ইভিএমের ওপর অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের এ অবিশ্বাস আমাদের আগামী নির্বাচনকে প্রতিযোগিতামূলক করার পথে একটি বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়াবে বলে আমাদের আশঙ্কা।’ তৃতীয়ত, একাদশ নির্বাচনের আগে ইভিএম কিনতে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার (৪৫০ মিলিয়ন ডলার) মতো ব্যয় হয়েছে। ১৫০টি ইভিএমে নির্বাচন করতে হলে নতুন মেশিন কেনায় অন্তত অর্ধ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে এ ধরনের বিপুল ব্যয় কতটুকু যৌক্তিক তা ভেবে দেখার অনুরোধ জানিয়েছেন বিবৃতিদাতারা।,



বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা মনে করেন, ইভিএম ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগণের যে আস্থাহীনতা তা দূর না করে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত আগামী নির্বাচন নিয়ে জনমনে সন্দেহ তৈরি হবে। এবং আরেকটি অনাকাঙ্ক্ষিত বিতর্কের ক্ষেত্র তৈরি করবে। তাই তারা জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত থেকে ইসিকে সরে আসার আহ্বান জানান।,



   The post appeared first on Sarabangla http://dlvr.it/SXs20F
এই পোস্টটি শেয়ার করুন
সবার আগে কমেন্ট করুন
কমেন্ট করতে ক্লিক করুন
comment url
আজকের সেরা খবর গতকালের সেরা খবর

এডিটর নির্বাচিত ভিডিও