রাস্তা পার হতে গিয়ে ২ বছরে সড়কে প্রাণ গেছে ১০২৭ শিশুর
ঢাকা: গত দুই বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় দেশে মোট ১ হাজার ৬৭৪ শিশু মারা গেছে। এর মধ্যে রাস্তা পার হতে গিয়ে মারা গেছে ১ হাজার ২৭ জন শিশু। যা মোট নিহতের ৬১ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ২০২০ সাল থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সংঘটিত দুর্ঘটনাগুলো এই প্রতিবেদনের আওতায় আনা হয়েছে।,গত ২৮ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু মৃত্যুর ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়— মহাসড়কে নিহত ২৮৭ শিশু (১৭.১৪%), আঞ্চলিক সড়কে নিহত হয়েছে ৩২৮ শিশু (১৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ), গ্রামীণ সড়কে নিহত হয়েছে ৮৮৯ শিশু (৫৩ দশমিক ১০ শতাংশ), শহরের সড়কে নিহত হয়েছে ১৪৭ শিশু (৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ) এবং অন্যান্য স্থানে নিহত হয়েছে ২৩ শিশু (১ দশমিক ৩৭ শতাংশ)।,
১ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী শিশু নিহত হয়েছে ৩৩৭টি (২০ দশমিক ১৩ শতাংশ), ৬ বছর থেকে ১২ বছর বয়সী শিশু নিহত হয়েছে ৭৫৪ টি (৪৫ দশমিক ৪ শতাংশ) এবং ১৩ বছর থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশু নিহত হয়েছে ৫৮৩ টি (৩৪ দশমিক ৮২ শতাংশ)।,
বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রী হিসেবে নিহত হয়েছে ৩৩১ শিশু, যা মোট নিহতের ১৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ। রাস্তা পারাপার ও রাস্তা ধরে হাঁটার সময় যানবাহনের চাপায়/ধাক্কায় নিহত হয়েছে ১০২৭ শিশু, যা মোট নিহতের ৬১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। ‘ট্রাক, পিকআপ, ট্রাক্টর, ড্রাম ট্রাক ইত্যাদি পণ্যবাহী যানবাহনের চালক ও সহকারী হিসেবে নিহত হয়েছে ৪৮ শিশু, অর্থাৎ ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ এবং মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী হিসেবে নিহত হয়েছে ২৬৮ শিশু, অর্থাৎ ১৬ শতাংশ।,
যাত্রী হিসেবে শিশু নিহতের যানবাহনভিত্তিক পর্যবেক্ষণে দেখা যায়— বাস যাত্রী হিসেবে নিহত হয়েছে ৭২ শিশু (২১ দশমিক ৭৫ শতাংশ) প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও অ্যাম্বুলেন্স যাত্রী হিসেবে ২৫ শিশু (৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ), থ্রি-হুইলার (সিএনজি, অটোরিকশা, ইজিবাইক ইত্যাদি) যাত্রী হিসেবে ১৮৩ শিশু (৫৫ দশমিক ২৮ শতাংশ), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের (নসিমন, ভটভটি, মাহিন্দ্র, টমটম ইত্যাদি) যাত্রী হিসেবে ৫১ শিশু (১৫ দশমিক ৪০ শতাংশ) নিহত হয়েছে।,
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া-আসার সময় নিহত হয়েছে ৭৩১ শিশু (৪৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ)। বসত বাড়ির আশে-পাশের সড়কে খেলাধুলার সময় নিহত হয়েছে ১৯৩ শিশু (১১ দশমিক ৫২ শতাংশ)। ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বসত ঘরের উপর উল্টে পড়ার ৩টি ঘটনায় রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় ৭টি শিশু নিহত হয়েছে।,
প্রতিষ্ঠানটির পর্যবেক্ষণে বলা হয়—শিশুরা গ্রামীণ সড়কে বেশি হতাহত হচ্ছে। কারণ গ্রামীণ সড়কগুলো বসত বাড়ি ঘেঁষা এবং এ সড়কের যানবাহনসমূহ কোনো প্রকার নিয়ম-নীতি মেনে চলে না। সড়ক নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিও থাকে না। আবার শিশুরাও সড়ক ব্যবহারের কোনো নিয়ম-নীতি জানে না। বিষয়টি নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে যেমন কোনো উদ্বেগ নেই, তেমনি সাধারণ মানুষের মধ্যেও কোনো প্রকার সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ‘অথচ এই অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে নীরবে আমাদের শিশুরা নিহত হচ্ছে, পঙ্গু হচ্ছে। ‘এটা জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। কারণ প্রতিটি শিশুই অমিত সম্ভাবনাময় এবং আজকের শিশুরাই আমাদের ভবিষ্যৎ।,