ইদে দর্শনার্থীদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত জাতীয় চিড়িয়াখানা
ঢাকা: রয়েল বেঙ্গল টাইগার, ঘোড়া, জেব্রা, জিরাফ, হাতি, কুমির, বানর থেকে শুরু করে সব ধরনের প্রাণীর খাঁচা ধুয়ে-মুছে নতুনের মতো করে তোলা হয়েছে। দুর্গন্ধমুক্ত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে প্রতিটি সড়ক। সড়কের পাশে রাখা হয়েছে পানি ও বেসিন, যেন গরমে ক্লান্ত দর্শনার্থীরা স্বস্তিতে ঘুরে বেড়াতে পারেন।
মহামারি কাটিয়ে উঠে ইদুল ফিতর সামনে রেখে এভাবেই নতুন রূপে দর্শনার্থীদের সামনে হাজির হবে জাতীয় চিড়িয়াখানা। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুই বছর পর ইদ উদযাপন হওয়ায় এবার দর্শনার্থীর সংখ্যা বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে সেভাবেই।সোমবার (২ মে) রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানায় গিয়ে দেখা গেছে, ইদ ঘিরে সাজ সাজ রব। চিড়িয়ানায় ঢুকতে হাতের বাঁ দিকে হরিণের খাঁচা। দর্শনার্থী কম থাকায় প্রাণীগুলো যেন আড়মোড়া ভেঙে উঠেছে। হরিণের বাচ্চা ছোটাছুটি করছে। আরেকটু এগিয়ে গেলেই বানরের খাঁচা। প্রচণ্ড গরমে বানরের দেখা তেমন পাওয়া না গেলেও এখানে ক্ষুদে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল।
এখান থেকে ডান দিকে গেলেই নানা প্রজাতির পাখির খাঁচা। সেই অংশ পেরিয়ে সরু রাস্তা ধরে সামনে দেখা মিলবে ভারতীয় সিংহের। সোমবার শেষ বিকেলে তার দেখা পাওয়া যায়নি। তবে সামনে ভালুকের খাঁচা পেরিয়ে রয়েল বেঙ্গল টাইগার বেশ দেখা দিচ্ছিলেন। সেখানে উৎসুক দর্শনার্থীদের ভিড়ও দেখা গেল। গরম থেকে স্বস্তি পেতে বাঘ মামাকে বার বার জলে ঝাঁপ দিতেও দেখা গেল।
আশপাশে ইমু পাখি, কেশোয়ারির খাঁচাগুলো ঘুরেও দেখা গেল, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে তোলা হয়েছে। এদিকে ইদের দিন দর্শনার্থীদের সামনে হাজির হওয়ার আগে জিরাফ, জেব্রা, হাতি, বুনো মহিষ থেকে শুরু করে সব প্রাণীকেই গোসলও করানো হয়েছে।
ইদ উপলক্ষে রাজধানীর রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় ভিড়ভাট্টা এড়াতে ইদের আগের দিনই বাচ্চাদের নিয়ে চিড়িয়ানায় বেড়াতে এসেছেন অনেকেই। যশোর থেকে এবার ঢাকায় শ্বশুরবাড়ি ইদ পালন করতে এসেছেন শাকিল আহমেদ। তিনিও পরিবার নিয়ে চিড়িয়ানায় এসেছেন।
শাকিল সারাবাংলাকে বলেন, অন্য সময় ঢাকায় এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়া খুব মুশকিল হয়ে যায়। অথচ আজ মাত্র ২০ মিনিটে ফার্মগেট থেকে মিরপুরে এসেছি। সব খোলামেলা, লোকজন কম, বাচ্চারা আনন্দ পাচ্ছে। আবার খাঁচাগুলো পরিষ্কার, দুর্গন্ধ নেই।
মিরপুর থেকে আসা মিনতি বিশ্বাস বলেন, অন্য সময় এমন পরিষ্কার থাকে না চিড়িয়ানাখানা। তাছাড়া প্রচুর মানুষ থাকে। ভিড় এড়াতেই এ সময় আসলাম। এসে ভালোই লাগছে।
মহামারি করোনাভাইরাসের কারনে টানা দুই বছর উৎসবমুখর পরিবেশে ইদ উদযাপন করতে পারেনি মানুষ। রাজধানীর বিনোদনকেন্দ্রগুলোও ছিল বন্ধ। এবার সংক্রমণ কমার পাশাপাশি বিধিনিষেধ না থাকায় বাড়তি আনন্দ যোগ হয়েছে ইদে। তাই বিনোদনকেন্দ্রগুলোও নিয়েছে ইদ উদযাপনের প্রস্তুতি। এর মধ্যে রাজধানীর জাতীয় চিড়িয়াখানা অন্যতম।
চিড়িয়াখানায় গত সপ্তাহে ঘোড়ার পরিবারে নতুন সদস্য যোগ হয়েছে। ঘোড়া শাবক দেখতে সেখানে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নতুন করে অস্ট্রেলিয়া থেকে রেড ক্যাঙ্গারু, অ্যারাবিয়ান লামা, আফ্রিকা থেকে সাদা পেলিক্যান পাখি, নীল ওয়ান্ডি বিস্ট ও সিংহ আনা হচ্ছে। প্রতিটি জাতের চারটি করে মোট ২০ টি প্রাণী আনা হবে।
জানতে চাইলে জাতীয় চিড়িয়ানার কিউরেটর মো. মুজিবুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, অন্যান্য ইদের মতো এবারও নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চিড়িয়াখানার ভেতরে আনসার মোতায়েন থাকবে। চিড়িয়াখানা এলাকা হকারমুক্ত করা হয়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও দুর্গন্ধমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে।
রাজধানীতে বসবাসকারী মানুষের ইদ বিনোদনের প্রধান বিনোদনকেন্দ্র মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানা। বিশেষ করে ছোটদের জন্য এ বিনোদনকেন্দ্র অন্যতম হলেও ইদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে এখানে সব বয়সী মানুষের সমাগম ঘটে। চিড়িয়ানার প্রবেশমূল্য ৫০ টাকা আর চিড়িয়াখানার ভেতরে প্রাণী জাদুঘর ঘুরে দেখতে চাইলে দিতে হবে আরও ১০ টাকা।
জাতীয় চিড়িয়াখানার তথ্য কর্মকর্তা ডা. মো. ওয়ালিউর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, উৎসবের সময়গুলোতে এখানে প্রচুর জনসমাগম হয়। সরকারি ছুটিগুলোতে প্রচুর দর্শনার্থী আসে চিড়িয়াখানায়। বিশেষ করে ইদের তিন দিন চিড়িয়াখানায় উপচে পড়া ভিড় থাকে। গত দুই বছর করোনার কারণে মানুষ ইদে ঘর থেকে বের হতে পারেননি। আমরা ধারণা করছি, সে কারণে এবার চিড়িয়াখানায় মানুষ বেশি আসবেন। কারণ ছোট বড় সব বয়সীদের বিনোদনের অন্যতম স্থান চিড়িয়াখানা। সেজন্য আমরাও নানা ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি।
চিড়িয়াখানার এই কর্মকর্তা বলেন, নিরাপত্তার জন্য আমরা সাতটি জোনে ভাগ করেছি চিড়িয়াখানাকে। কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে সাত জোনে ব্যবস্থাপনা করা হয়েছে। চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য মিরপুর জোনের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে পুলিশ চাওয়া হয়েছে। দর্শনার্থীদের জন্য গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ফুটপাথ থেকে হকার তুলে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ১৮৬ একর জায়গাজুড়ে চিড়িয়াখানা। এখানে প্রায়ই বাচ্চা হারিয়ে যায়। সেজন্য আমরা পুরো চিড়িয়াখানাজুড়ে ১৬টি মাইক বসানো হয়েছে। এছাড়া গরমের জন্য সাত স্থানে গ্লাসসহ পানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রাণীদের জন্যও পানির পর্যাপ্ত সরবরাহ রাখা হয়েছে। `মানুষের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।,
১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় চিড়িয়াখানায় ৩৮ প্রজাতির ৩৮টি প্রাণী, ১৯ প্রজাতির ২৭১টি বড় তৃণভোজী প্রাণী ও ১৮ প্রজাতির ১৯৮টি ক্ষুদ্র স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে। আরও আছে ১০ প্রজাতির ৭২টি সরীসৃপ, ৫৬ প্রজাতির ১ হাজার ১৬২টি পাখি এবং অ্যাকুরিয়ামে রক্ষিত ১৩৬টি প্রজাতির ২ হাজার ৬২৭টি মাছজাতীয় প্রাণী। `১৩৭টি খাঁচায় এসব প্রাণী রাখা হয়েছে।,
The post appeared first on Sarabangla https://ift.tt/qB1tKuw