স্বাধীনতার পঞ্চাশে বাংলাদেশ
আজ ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ "মহান বিজয় দিবস"। ১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বর চুড়ান্ত বিজয় অর্জনের সাক্ষী হিসাবে দিবসটি উদযাপনে বাঙ্গালী জাতি প্রতিবছরই বিজয় উল্লাসে মেতে উঠে। এটির মধ্য দিয়ে জাতি অতীত ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে গর্বিত হয়।গৌরবের,অর্জনের,ঐতিহ্যের-একটি বিরল বিজয় দিবস-হচ্ছে এবারের ১৬ই ডিসেম্বর ২০২১।
স্বাধীনতার ৫০বছরে সুবর্ন জয়ন্তীতে বাংলাদেশ একটি নতুন অধ্যায়কে অতিক্রম করতে যাচ্ছে।২০২১সাল মুজিব শতবর্ষকে স্পর্শ করে উন্নয়নের অভিষ্ট লক্ষে পৌঁছে - পরিনত হয়েছে মধ্যম আয়ের দেশে-- প্রবেশ করেছে শিল্প বিপ্লবের চতুর্থ ধাপে।"জন্মেছি বাংলায়--তাই ধন্য আমি বাঙ্গালী বলে"--শৈশবে মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতা এখনো আমাকে আতংকিত করলেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু-সমকালীন বুদ্ধিজীবি,মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, এবং মুক্তিযোদ্ধাদের দেশপ্রেমের জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত কৈশোর এবং যৌবনকে দারুনভাবে প্রভাবিত করেছে।
স্বাধীনতার ৫০বছরে এসে সুবর্ন জয়ন্তীর বিশাল আয়োজনে - শৈশবের দেখা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি--, কৈশোর এবং যৌবনের লালিত আদর্শ এবং একাডেমিক শিক্ষা জীবন ও চিন্তা বিকাশের সাক্ষী হিসাবে উপস্থাপনের সুযোগ স্বল্পতায় পেশাগত দায়বদ্ধতা সংকুচিত হয়েছে। ১৪ই এবং ১৬ডিসেম্বরের মতো জাতীয় দিবসের যথার্থতা বিকাশে মননশীল মানুষগুলোর অনুপস্থিতিই আয়োজকদের হীনমন্যতার বহিঃপ্রকাশ।জাতীয় দিবসে মুক্তিযুদ্ধের গবেষনা কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ সহ নানান পেশাজীবি মানুষকে সম্পৃক্ত না করে ব্যক্তি হিংসা চরিতার্থ নিঃসন্দহে রাষ্ট্র এবং স্বাধীনতা বিরোধী।এটির জন্য হৃদয়ে গভীর অনুভূতি সম্পন্ন সরকারি প্রতিনিধি অপরিহার্য।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারন করে ইতিহাস চর্চায় কমবেশী মনোযোগী থেকে অধ্যাপনায় পার করতে যাচ্ছি ২৭টি বছর। বাংলাদেশের রক্তাক্ত ইতিহাসের গর্বগাথা ঐতিহ্যকে শিক্ষার্থীদের হৃদয়ের অনুভূতিতে পৌঁছে দিতে সাধ্যাতীত চেষ্টা করে যাচ্ছি। "স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদ্বয়ের ইতিহাস" প্রচার এবং সংরক্ষণে আমরা বদ্ধ পরিকর। আমরাই ইতিহাসের সাক্ষী--তাই ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে -" সভ্যতা যেখানে অনুপস্থিত, শিক্ষা সেখানে মুল্যহীন"।
সরকার বাঙ্গালির গর্বগাথা ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলোকে স্মরনীয় করে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে জাতীয় দিবস উদযাপন এবং প্রচারে গুরুত্বারোপ করে নির্দেশনা জারি করেছে।সেই গুরুত্ব অনুধাবনে দিবসটির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং আয়োজকদের আন্তরিকতায় দিবসটির যথার্থতা বিকাশ সফল হতে পারে।কিন্তু শুধু সরকারি নির্দেশনা "দায়সারা ভাবে পালনের জন্য পালিত" -এমনটি কাংখিত অর্জনকে বাধাগ্রস্ত করবে।
এদিকে বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদযাপনে সরকারের নির্দেশিত আয়োজনের বাজেট বরাদ্দ নিয়ে দৃশ্যপটে সৃষ্টি হচ্ছে বিভ্রান্তি -এতে স্হানীয় পর্যায়ে দৃশ্যতঃ অনুষ্ঠান আয়োজন বর্ধনের চেয়েও, চাঁদা আদায়ের নম্রতা ক্রমান্বয়ে যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে--তাতে দিবসটির যথার্থতা বিকাশের মহান উদ্দেশ্য ব্যাহত হতে পারে। এটি অতি উৎসাহীদের সুবিধা বর্ধন করলেও আসল উদ্দেশ্যকে করছে প্রশ্নবিদ্ধ। এটি থেকে পরিত্রানের একমাত্র পথ হচ্ছে--চেতনায়,অনুভবে আপাদমস্তক মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন একজন আদর্শিক সৎ মানুষ। অন্যথায় সমাজ,রাষ্ট্র ও নাগরিক উভয়ই সমন্বিত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
মোঃ এমদাদুল হক বাবুল, প্রভাষক,ইতিহাস বিভাগ, পূর্বধলা সরকারি কলেজ।
অনেক অনেক সুন্দর ছিল 🥰