শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মরণে
১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্বিজীবি দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে দখলদার পাকহানাদার বাহিনী ও তার দোসর রাজাকার আল-বদর, আল-শামস মিলিতভাবে বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে জাতিকে মেধাশুন্য করার ঘৃন্য চেষ্টায় লিপ্ত হয়।
যাদের নির্ভীক লেখনী তৎকালীন সকল উপনিবেশিক শাসনামলের শোষনের বিরুদ্ধে সমাজ এবং ভূ-খন্ডকে জাগ্রত করে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছিলো তারা হলেন, আমাদের সম্মানিত শিক্ষক, চিকিৎসক, শিল্পী, সাহিত্যিক,লেখক,সাংবাদিক। সেই সমস্ত প্রতিবাদী কন্ঠের অগ্রপথিক বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মূর্ত প্রতীক হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ব করে একটি শোষনহীন সমাজ প্রতিষ্টায় প্রতিবাদের সেই ঝড়কে সঠিক পথের দিক নির্দেশনা দিয়েছে।
পথহারা বঙ্গালী মুকুট হীন সম্রাট বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষনের নির্দেশিত পথে ২৬ই মার্চের আনুষ্টানিক ঘোষনাকে আলোর দিশারি হিসাবে গ্রহন করে ঝাপিয়ে পড়েছিল সশস্র সংগ্রামে। এই সংগ্রামের রক্তগঙ্গার বন্যায় ভেসে বাঙ্গালী জাতি দীর্ঘ নয় মাসের প্রতীক্ষা আর পরীক্ষার সফল পরিনতির মধ্য দিয়ে অবশেষে সকল পথ পরিক্রমার অবসান ঘটিয়ে যখন বিজয়ের দ্বারকে করে উন্মুক্ত, ঠিক এর মাত্র দু ’দিন আগে জাতির বিবেক আমাদের সম্মানিত শিক্ষক, লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও চিকিৎসকদের হত্যা করে তাদের পরাজয়ের প্রতিহিংসাকে চরিতার্থ করেছিলো।
বুদ্ধিজীবীদের হত্যার ঠিক দুই দিন পর ১৬ ডিসেম্বর পশ্চিম পাকিস্তানের পুর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বাধীন বর্বর পাকিস্তানী বাহিনী আত্মসমর্পণে বাধ্য হয় এবং অবনত মস্তকে আত্মসমর্পণ দলীলে স্বাক্ষর করে। অর্জিত হয় বাঙালির কাংখিত বিজয়। এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে স্বাধীন দেশ হিসাবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
ইতিহাসের এই বর্বোরোচিত হত্যাকান্ডের কুলাঙ্গারদের প্রতি ঘৃণা জানায় কোটি কোটি দেশপ্রেমিক বাঙালি। তাইতো স্বাধীনতার কবি প্রয়াত শামসুর রাহমান তাঁর কবিতায় জাতির সূর্যসন্তানদের হন্তারক দেশদ্রোহী রাজাকার এবং আলবদর-আলশামসদের শাস্তি কামনা করেছেন এইভাবে “আজ এই ঘোর রক্ত গোধূলীতে দাঁড়িয়ে/ আমি অভিশাপ দিচ্ছি তাদের/ যারা আমার কলিজায় সেঁটে দিয়েছে/ একখানা ভয়ানক কৃষ্ণপক্ষ/’কিংবা ‘একঝাঁক ঝাঁ ঝাঁ বুলেট তাদের বক্ষ বিদীর্ণ করুক/ এমন সহজ শাস্তি আমি কামনা করি না তাদের জন্য’।
তাই আমরাও কবির উচ্চারণের সাথে দীপ্তকন্ঠে বলছি আজ সেই চৌদ্দই ডিসেম্বর ২০২১ সালের শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে দেশের মেধাবী ও শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবী নিধনের মর্মন্তুদ স্মৃতিঘেরা শোকাবহ দিন ইতিহাসের পাতায় কালো অক্ষরে উৎকীর্ণ বেদনা বিধুর কালবেলা। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পার হলেও গোটা জাতি ও শহীদদের স্ত্রী-পুত্র-কন্যা এবং স্বজনেরা আশায় বুক বেঁধেছে, বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীসহ সকল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্য সম্পন্ন হবে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুর্বন জয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষে আনন্দের উচ্ছাসের সাথে বুদ্ধিজীবিদের স্মরণ-নিঃসন্দেহে আমাদেরকে অতীত ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তুলবে। শহীদ বুদ্ধিজীবিদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্বা।
মোঃ এমদাদুল হক বাবুল, প্রভাষক- ইতিহাস বিভাগ, পূর্বধলা সরকারি কলেজ।