মানিকগঞ্জে করলার বাম্পার ফলন,লাভবান কৃষকরা
রাজধানীর সঙ্গে যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত থাকায় ঢাকার পাইকারি বাজারে মানিকগঞ্জের সবজির বেশ চাহিদাও রয়েছে। ঢাকার পাইকারি বাজারে করলার চাহিদা থাকায় কারওয়ান বাজার, শ্যামবাজার, যাত্রাবাড়ী, গাজীপুরের চৌরাস্তা, সাভারের বাইপাইল এলাকা থেকে প্রায় ২০ জন পাইকারি ক্রেতারা সবজি ক্রয়ের জন্য আসেন মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায়। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার চরকৃষ্ণপুর, চর মকিমপুর, পূর্ব চর মকিমপুর, বারাহিরচর, গারাকুল, গুজুরী এলাকা ঘুরে দেখা যায়- ক্ষেতে চাষাবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন কয়েক শতাধিক করলা চাষিরা। স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় বাবা-মায়ের সঙ্গে ক্ষেতের পরিচর্যা ও করলা সংগ্রহ করছে শিক্ষার্থীরাও। করলা সংগ্র অস্থায়ী পাইকারি আড়তে রাখা হচ্ছে সদর উপজেলার চর মকিমপুর এলাকার কৃষক সোহাগ মোল্লা জানান, বন্যার পানি নামার পরই দুই বিঘা জমিতে করলার চাষাবাদ করেছেন তিনি।
এতে তার জমির হাল চাষ, বীজ, সার-কীটনাশক, মাচা তৈরি ও শ্রমিকের মজুরিসহ বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। স্থানীয় বাজার এবং পাইকারি বাজারে করলার দরদাম ভালো পাওয়ায় এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ টাকার করলা বিক্রি করছেন তিনি। বাজারদর ভালো থাকলে আরো এক লাখ টাকার করলা বিক্রি করতে পারবেন বলেও জানান এই কৃষক। কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের মকিমপুর এলাকার কৃষক নাদের আলী জানান, ৬০ শতাংশ জমিতে করলার চাষাবাদে প্রায় ৪০ হাজার টাকার খরচ হয়েছে তার। বাজারে করলা বিক্রি করছেন এক লাখ টাকারও বেশি। সামনে আরো দেড় লাখ টাকার করলা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি। মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্স শেষ বর্ষের ছাত্র জাকির হোসেন বলেন, ‘বীজ বপনের ৪০ দিন পর থেকে আগামী ৬০ দিন পর্যন্ত করলার ফলন তোলা যায়। তিন বিঘা জমিতে করলা আবাদে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ফলন ভালো আর পাইকারি বাজারে দরদাম ভালো থাকায় তিন লাখ টাকার করলা বিক্রি করেছি। সামনে আরো লাখ টাকার করলা বিক্রি করতে পারব।’ করলার বাম্পার ফলন হয়েছে পাইকারি ক্রেতা আব্দুর রহিম বলেন, ‘ঢাকার পাইকারি বাজারে মানিকগঞ্জের সবজির বেশ চাহিদা আর যাতায়াত ব্যবস্থাও অনেক ভালো। ফলে প্রতিদিন এখান থেকে প্রায় ১০০ মণ করলা কিনে ঢাকার পাইকারি বাজারে নিয়ে যাই। সেখানে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি।’ শাজাহান নামের আরেক পাইকারি ক্রেতা বলেন, ‘মানিকগঞ্জের চর এলাকা থেকে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ মণ করলা ক্রয় করে ঢাকার পাইকারি বাজারে বিক্রি করি। কৃষকের কাছ থেকে প্রতি মণ করলা কিনি এক হাজার ৫০০থেকে এক হাজার ৬০০ টাকায়। আর ঢাকার বিভিন্ন পাইকারি আড়তে বিক্রি করি হয় প্রতি মণ এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকায়। তাতে পরিবহন ও শ্রমিকের খরচ বাদে বেশ লাভ থাকে।’ মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শাহজাহান আলী বিশ্বাস সারাক্ষণ’কে বলেন, ‘দু’দফা বন্যার পানি জমি থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে জেলার কৃষকরা শীতকালীন বিভিন্ন বাহারি সবজির চাষাবাদ করেছে। চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ৯ হাজার হেক্টর জমিতে এসব সবজির আবাদ করা হয়েছে। করলার বাম্পার ফলন আর দরদাম ভাল পাওয়ায় জেলার কৃষকরা বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারছে বলেও জানান এ কৃষি কর্মকর্তা।